কলকাতা পুরসভা অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ জল ও গঙ্গার জল তুলে তা পরিশোধন করে পাইপের মাধ্যমে সমস্ত ওয়ার্ডে পৌঁছে দেওয়া হয়। অভিযোগ, গত রোববার থেকে একাধিক ওয়ার্ডে কল খুললেই ঘোলা জল বার হচ্ছে। জলের চাপও অত্যন্ত কম। ফলে পানীয় জলের অভাব শুরু হয়েছে। কোনো বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় সাধারণ মানুষকে জল কিনে খেতে হচ্ছে। আর তারই সুযোগ নিয়ে পানীয় জলের কালো বাজারি শুরু হয়েছে। বিপুল দামে ২০ লিটারের পানীয় জলের জার বিক্রি হচ্ছে।
গত কিছুদিন ধরেই বৃষ্টিতে জেরবার কলকাতা ও শহরতলি। কলকাতা-সংলগ্ন হাওড়া এবং একাধিক জেলায় বন্যা চলছে। কলকাতার বিভিন্ন এলাকাও জলের তলায় ছিল। শহরের জল নামলেও পানীয় জল নিয়ে সমস্যা শুরু হয়েছে। কল খুললেই ঘোলা জল বের হচ্ছে বলে অভিযোগ।
কেন ঘোলা জল
পুরসভার বক্তব্য, গত কয়েকদিন ধরে দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি) বিপুল পরিমাণ জল ছাড়তে শুরু করেছে। ডিভিসির বক্তব্য, বৃষ্টির কারণে নদীর উপর তৈরি করা জলাধারগুলি পূর্ণ হয়ে গেছে। জল না ছাড়লে বাঁধ (ড্যাম) ভেঙে যেতে পারে। তাই জল ছাড়া হচ্ছে। পুরসভার বক্তব্য, ডিভিসি বিপুল পরিমাণ জল ছাড়ায় গঙ্গায় জলের স্তর বেড়ে গেছে। সঙ্গে বেড়েছে পলির পরিমাণ। সেই জল শোধনাগার হয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডে পৌঁছালেও অতিরিক্ত পলি থেকে যাচ্ছে। তাই জল ঘোলা মনে হচ্ছে। পুরসভার এক ইঞ্জিনিয়ার ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, যে জল বাড়িতে পৌঁছাচ্ছে, তা ঘোলা হলেও পানের অযোগ্য নয়। তার কথায়, ”ওই জল একটু রেখে খেলেই কোনো সমস্যা হবে না। পলি নীচে থিতিয়ে যাওয়ার সময়টুকু দিতে হবে মাত্র।” পুরসভার আরেক ইঞ্জিনিয়ারের বক্তব্য, যে ঘোলা কল খুললে পড়ছে, পুরসভার পরীক্ষাগারে তা পরীক্ষাও করা হচ্ছে। ওই জল খাওয়ার অযোগ্য নয়।
স্থানীয় মানুষের বক্তব্য
পুরসভা যা-ই বলুক, স্থানীয় মানুষের বক্তব্য, ঘোলা জল খেতে তারা ভয় পাচ্ছেন। কেউ কেউ ওই জল ফুটিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করছেন। কেউ বাজার থেকে জল কিনে খাচ্ছেন। অভিযোগ, জলের সমস্যা বুঝে, বাজারে পানীয় জলের কালোবাজারি শুরু হয়েছে। বিপুল দামে ২০ লিটারের জার বিক্রি হচ্ছে।
কলকাতার মানিকতলা, কুমোরটুলি, উল্টোডাঙার মতো এলাকায় ঘোলা জলের সমস্যা সবচেয়ে বেশি। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, পানীয় জলের কোনো বিকল্প ব্যবস্থাও করতে পারেনি পুরসভা। মাঝে মাঝে পুরসভা গাড়িতে করে পানীয় জল দিয়ে গেলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা নেহাতই অপ্রতুল। কতদিন এমন ঘোলা জল বের হবে, সে বিষয়েও পুরসভার তরফে তাদের কিছু জানানো হয়নি।
তবে ডয়চে ভেলেকে পুরসভা বলেছে, আরো দুই-তিনদিন এই সমস্যা চলবে। গঙ্গার জলে পলির পরিমাণ কিছুটা কমলেই সমস্যার সমাধান হবে। পুরসভার বক্তব্য, অতিরিক্ত পলি পরিশোধনের জন্য ডাবল ফিল্টারিংয়েরও ব্যবস্থা করা হয়েছে কোনো কোনো জায়গায়। সে কারণেই জল দিতে সময় লাগছে। জলের চাপ কমে যাচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যেই সমস্যা মিটে যাবে।
সংবাদমাধ্যমকে কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারপার্সন ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, ”পলতার শোধনাগারে গঙ্গার যে জল আসছে, তাতে পলির পরিমাণ অনেকটাই বেড়ে গেছে। ফলে জলের উপরের অংশ নিয়ে তা দীরঘ সময় ধরে পরিশোধন করা হচ্ছে। সে কারণে জল সরবরাহের পরিমাণ কিছুটা কমেছে। দুইদিন এই সমস্যা থাকবে।”
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য
নদী বিশেষজ্ঞ সুপ্রতিম কর্মকার ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ”কলকাতার জলস্তর নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন। একদিকে যেমন জলস্তর নামছে, তেমনই নদীর জলে পলির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে অদূর ভবিষ্যতে এই সমস্যা আরো বৃদ্ধি পাবে।”
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ইরিগেশন বিভাগের সঙ্গে যুক্ত এক বিজ্ঞানী ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ”নদী সংস্কারের নামে সরকার কেবল পার বাঁধায় এবং নদীর ধারে পার্ক বানায়। কিন্তু ড্রেজিংয়ের কাজ ঠিক মতো করা হয় না। সে কারণেই অতিরিক্ত জল ঢুকতেই পলির পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। নদীর সংস্কার করা অত্যন্ত জরুরি।”
জলসংকট নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধীরাও। বিজেপি নেতা এবং বিধানসভায় বিজেপির বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছেন, ”মানুষের কাছে দ্রুত খাওয়ার জল পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। জল নিয়ে যে কালোবাজারি শুরু হয়েছে, তা বন্ধ করতে হবে প্রশাসনকে।”
সাধারণ মানুষের ক্ষোভ একটাই, তিনদিন হয়ে গেল, কেন পুরসভা এখনো বিকল্প পানীয় জলের ব্যবস্থা করতে পারল না।
এসজি/জিএইচ (পিটিআই, আনন্দবাজার)
Source: https://www.dw.com/bn/%E0%A6%98%E0%A7%8B%E0%A6%B2%E0%A6%BE-%E0%A6%9C%E0%A6%B2%E0%A7%87-%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A4-%E0%A6%95%E0%A6%B2%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A6%BE/a-59420758