হুমায়ূন আহমেদের কলকাতা বিজয় – কালের কন্ঠ

কলকাতা নিউজ

হুমায়ূন ভাই লেখক হিসেবে যে মাপের, মানুষ হিসেবেও সেই মাপেরই। তাঁর হৃদয় ছিল শরীরের তুলনায় কোটি গুণ বড়

আজ ১৩ নভেম্বর। হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন। এক জন্মদিনের আগের দিনের কথা। বোধ হয় ’৮৬ সাল। হুমায়ূন আহমেদ শহীদুল্লাহ হলের হাউস টিউটর। পুকুরপাড়ে কোয়ার্টারে থাকেন। দোতলায় তাঁর ফ্ল্যাট। সন্ধ্যাবেলা আমরা মাঝে মাঝে আড্ডা দিতে যাই। সেদিনও গেছি। সালেহ চৌধুরী, নির্মলেন্দু গুণ আর হুমায়ুন আজাদ আছেন। আমি হুমায়ূন ভাইকে বললাম, কাল আপনার জন্মদিন, কী গিফট দেব? নির্মলদা অবাক। আমরা একজন আরেকজনকে এভাবে গিফটের কথা বলছি! কথাটা তিনি বললেনও। শুনে হুমায়ূন ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, গিফটটা ক্যাশ হলে ভালো হয়। হুমায়ূন আহমেদের রসবোধ ছিল এ রকম। কলকাতার এক হোটেলে উঠেছেন। শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় খবর পেয়েছেন। হোটেলে ফোন করে হুমায়ূন ভাইকে বলেছেন, দেখা করতে আসবেন।

হুমায়ূন ভাই সেদিন দুপুরের পরই সময় দিয়েছেন। শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা সম্পর্কে হুমায়ূন ভাইয়ের তেমন ধারণা ছিল না। পরে ঢাকায়, তাঁর দখিন হাওয়ার ফ্ল্যাটের আড্ডায় ঘটনাটি বলতে বলতে হঠাৎই আমাকে জিজ্ঞেস করলেন,

 শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের দু-চারটা লেখার কথা বলো তো? আমি শ্যামলদার লেখার ভক্ত। ঢাকা কলকাতায় অনেকবার তাঁর সঙ্গে আড্ডা হয়েছে। আমি তাঁর কিছু অসাধারণ লেখার কথা বললাম, ‘কুবেরের বিষয় আশয়’ ‘ঈশ্বরীতলার রুপোকথা’ ‘স্বর্গের আগের স্টেশান’ ‘হাওয়া গাড়ি’ ‘শাহজাদা দারশুকো’—এই সব উপন্যাস আর কয়েকটি গল্পের কথা বললাম; যেমন ‘চন্দনেশ্বরের মাচান তলায়’ ‘পরী’ ‘গত জন্মের রাস্তা’। আর তাঁর একেবারেই নতুন ধরনের গদ্যভাষার কথাও বললাম। হুমায়ূন ভাই শুনলেন, তারপর ঘটনাটা বললেন।

হুমায়ূন আহমেদ যে অসাধারণ জাদুকরী ভঙ্গিতে লিখতেন, গল্পও করতেন ঠিক সেই ভঙ্গিতে। তিনি কথা বলার সময় আমরা মুগ্ধ বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে থাকতাম। সেই সন্ধ্যায়ও আছি। তো, শ্যামলদা দুপুরের পরপর হুমায়ূন ভাইর হোটেলে এলেন। রুমে বসে চা খেতে খেতে গল্প হচ্ছে দুই লেখকের। শ্যামলদাকে যাঁরা চেনেন, যাঁরা তাঁর লেখা পড়েছেন তাঁরা জানেন, তাঁর রসবোধ চমৎকার। আর হুমায়ূন আহমেদের রসবোধের তো তুলনাই হয় না। কথায় কথায় শ্যামলদা একসময় বললেন, আমার দাঁতগুলো দেখেছেন হুমায়ূন? কী চকচক করছে! আসলে ফলস দাঁত লাগিয়েছি। এই দাঁতের মুশকিল হলো চুমু খেতে অসুবিধা!

হুমায়ূন ভাই সিগ্রেট টানতে টানতে নির্বিকার গলায় বললেন, দাঁত খুলে নেবেন। নিজের খুলতে অসুবিধা হলে প্রেমিকাকে বলবেন মাঝারি সাইজের একটা চড় মারতে, দাঁত আপনাআপনি খুলে বেরিয়ে আসবে। তারপর হুমায়ূন ভাই তাঁর অতি বিনয়ী ভঙ্গিতে, হাসিমুখে বললেন, আপনি একবার সন্তোষকুমার ঘোষকে চড় মেরেছিলেন। চড় মেরে ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’র চাকরি ছাড়লেন। আমি সেই স্মৃতি মনে রেখে চড়ের কথাটা বললাম। কিছু মনে করবেন না।

কলকাতার লেখকদের মধ্যে হুমায়ূন ভাইর প্রথম যোগাযোগ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে। ’৭০ সালে প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’। ’৭২ সালের শুরুর দিকে সেই উপন্যাসের একটি কপি কেমন কেমন করে গিয়ে পড়ল সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের হাতে। ‘নন্দিত নরকে’ তখন আমাদের লেখক বুদ্ধিজীবী মহলে ব্যাপক আলোচিত। বইয়ের ভূমিকা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে লিখেছেন মনীষী আহমদ শরীফ। শওকত আলী প্রমুখ লেখক পত্রপত্রিকায় আলোচনা লিখছেন। বাংলা সাহিত্যে একেবারে নতুন স্বাদ নিয়ে এসেছেন হুমায়ূন আহমেদ। অতি সাদামাটা সরল ভাষায় মধ্যবিত্ত জীবনের সুখ দুঃখ আনন্দ বেদনার গল্প আগে এভাবে কোনো লেখক লিখতে পারেননি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তখন ‘দেশ’ সাপ্তাহিকে ‘সনাতন পাঠক’ নামে বইপত্রের আলোচনা এবং লেখকদের নিয়ে কলাম লেখেন। অন্যদিকে ‘কৃত্তিবাস’ বের করেন বন্ধুদের সঙ্গে। ‘নন্দিত নরকে’ নিয়ে তিনি একটি লেখা লিখলেন। তাঁর সেই লেখার মধ্য দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের পাঠক জানতে পারলেন বাংলাদেশের এক তরুণ তুখোড় ঔপন্যাসিকের কথা, কালক্রমে যিনি কিংবদন্তি হয়ে উঠলেন। হুমায়ূন ভাই তার পরই সুনীলদাকে চিঠি লিখেছিলেন। পত্র যোগাযোগ তাঁদের মধ্যে ছিল। ধীরে ধীরে সেই যোগাযোগ গভীর হলো। সুনীলদা ঢাকায় এলেই হুমায়ূন ভাইর ফ্ল্যাটে আসেন। সাহিত্যের আড্ডা আর গানে, আমাদের তুমুল হৈ-হল্লায় সময় কাটে। কখনো কখনো স্বাতীদিও (স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের স্ত্রী) থাকেন।

একবার পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের লেখকদের নিয়ে সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে কলকাতায়। বাংলাদেশ থেকে আমন্ত্রিত হয়ে গেছেন আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ও হুমায়ূন আহমেদ। অনুষ্ঠানের সভাপতি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস তাঁর লেখার মতোই অতি সিরিয়াস বক্তৃতা দিলেন। প্রেমের গল্প উপন্যাস যাঁরা লেখেন, হালকা চালের পাঠকমন জয় করা যাঁরা লেখক তাঁদের খুব একচোট নিলেন। আকার ইঙ্গিতে হুমায়ূন আহমেদকেও একটু ধরলেন, একটু তুচ্ছতাচ্ছিল্য করলেন।

হুমায়ূন আহমেদ বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ। মুহূর্তেই বুঝলেন ব্যাপারটা। লজ্জা পেলেন, মাথা নিচু করে বসে রইলেন। সুনীলদা ব্যাপারটা বুঝতে পারলেন। সভাপতির বক্তব্য দিতে উঠে তিনি আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের বক্তব্য বিভিন্ন যুক্তিতে খণ্ডন করলেন, প্রেমের গল্প কবিতা উপন্যাস নিয়ে এমন কিছু কথা বললেন, পৃথিবীর বিখ্যাত সব লেখকের প্রেমবিষয়ক লেখার উদ্ধৃতি দিলেন, হুমায়ূন ভাইর মন ভালো হয়ে গেল। আর কে না জানে, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো পাঠক বাঙালি লেখকদের মধ্যে বিরল। সারা পৃথিবীর সাহিত্য তিনি ভেজে খেয়েছেন। তারপর আরেকটা কাজ করলেন সুনীলদা। তখন হুমায়ূন ভাইকে তিনি আপনি করে বলতেন। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর বললেন, হুমায়ূন, আমাদের একটা আড্ডাখানা আছে, নাম ‘বুধসন্ধ্যা’। প্রতি বুধবার সন্ধ্যায় আমরা ওখানটায় বসে আড্ডা দিই, গান গল্প করি। কবিতা গল্প পড়ি। কাল ‘বুধসন্ধ্যা’র একটা গল্পপাঠের আসর আছে। আপনি গল্প পড়বেন।

পরদিন ‘বুধসন্ধ্যা’য় গল্প পড়লেন হুমায়ূন ভাই। গল্পের নাম ‘আনন্দ বেদনার কাব্য’। পড়া শুরু করার কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই স্তব্ধ হয়ে গেল হলরুম। একটা সময় দেখা গেল, শ্রোতারা অনেকেই চোখ মুছছেন। হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন এ রকম জাদুকর। লিখে মানুষ কাঁদাতে আর হাসাতে তাঁর তুলনা তিনি নিজে।

কলকাতার দুজন লেখকের খুব প্রিয় জায়গা ঢাকা। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার। ঢাকায় এলে হুমায়ূন ভাইর ফ্ল্যাটে তাঁরা আসবেনই, নুহাশপল্লীতে গিয়ে একটা রাত হলেও থাকবেন। দুজনেই এত ভালোবাসেন হুমায়ূন আহমেদকে, লেখক হিসেবে এত শ্রদ্ধা করেন, ভাবা যায় না! বড় লেখকের পাশাপাশি এই দুজন মানুষ হিসেবেও বড়, হুমায়ূন আহমেদের মতোই। হুমায়ূন ভাই লেখক হিসেবে যে মাপের, মানুষ হিসেবেও সেই মাপেরই। তাঁর হৃদয় ছিল শরীরের তুলনায় কোটি গুণ বড়।

আরেকজন বড় লেখক হুমায়ূন আহমেদের লেখা এবং ব্যক্তি হুমায়ূনকে খুবই ভালোবাসেন। তিনি শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। হুমায়ূন ভাই শীর্ষেন্দুর লেখা যেমন পছন্দ করতেন, মানুষটিকেও পছন্দ করতেন। ঢাকায় এলে হুমায়ূন ভাইর সঙ্গে দেখা শীর্ষেন্দুদা করতেনই। এক দু ঘণ্টা গল্প করতেন। ঐশ্বরিক জগতের গল্প, ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের গল্প। শীর্ষেন্দুদার জীবনযাপন অন্য রকম। এক ধরনের সাত্ত্বিক জীবন যাপন করেন তিনি। লেখেন অসাধারণ। এখনো মন্ত্রমুগ্ধের মতো আমরা তাঁর লেখা পড়ি। হুমায়ূন ভাই বেশি পছন্দ করতেন শীর্ষেন্দুদার কিশোরদের লেখাগুলো। ঢাকার বহু অনুষ্ঠানে শীর্ষেন্দুদার বক্তৃতা শুনেছি আমি। সেই সব বক্তৃতায় হুমায়ূন আহমেদের লেখার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করতেন তিনি।

এবার সমরেশ মজুমদারের কথা বলি। নব্বই দশকের শুরুর দিকে প্রথম ঢাকায় এলেন সমরেশদা। তত দিনে তিনি বাংলা ভাষার জনপ্রিয়তম লেখকদের একজন। ‘উত্তরাধিকার’ ‘কালবেলা’ ‘কালপুরুষ’—এই ট্রিলজি জনপ্রিয়তার আগের অনেক রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে। আমরা আবিষ্ট হয়ে আছি সেই ট্রিলজির মায়ায়। তারপর তিনি লিখলেন দুই পর্বের ‘সাতকাহন’। এই উপন্যাস আরো এক ধাপ এগিয়ে নিল তাঁকে। তার আগে সমরেশদার প্রথম উপন্যাস ‘দৌড়’ ‘এই আমি রেণু’ আর ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর দুর্দান্ত একেকটা গল্প পড়ে পাঠক মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে আছে। সমরেশদা ঢাকায় এলেন পার্ল পাবলিকেশন্সের স্বত্বাধিকারী আলতাফ হোসেনের আমন্ত্রণে। আলতাফ সাহেবের ডাকনাম ‘মেনু মিয়া’। আমরা ডাকতাম ‘মিনু ভাই’। অতি বড় হৃদয়ের অসাধারণ মানুষ। আহা, কত ভালো ভালো মানুষ আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন! মিনু ভাইও অকালে চলে গেলেন।

হুমায়ূন ভাইর সঙ্গে সমরেশদার পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন মিনু ভাই। আমার পরিচয়ও মিনু ভাইর মাধ্যমেই। পরিচয়ের প্রথম দিন থেকেই আমি সমরেশদাকে তুমি বলি। গভীর ভালোবাসা থেকেই বলি। যেমন বলি বেলাল চৌধুরী, রফিক আজাদ, মোহাম্মদ রফিক, রবিউল হুসাইনকে।

সমরেশদাকে আমার এই তুমি বলাটা একদমই পছন্দ করতেন না হুমায়ূন ভাই। এ নিয়ে আমাকে একদিন মৃদু বকাঝকা করলেন। ২০০৮ সালের কথা। তখন আমি ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’র আমন্ত্রণে কলকাতায় যাচ্ছি। ‘মৈত্রী ট্রেন’ উদ্বোধন হবে, সেই অনুষ্ঠানে। একসঙ্গে দুটো ট্রেন রওনা দেবে। একটা কলকাতা থেকে, একটা ঢাকা থেকে। ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’ ঠিক করেছে কলকাতা থেকে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় যাবেন ঢাকায়, যেতে যেতে একটা লেখা লিখবেন, আর ঢাকা থেকে আমি আসব, আসার পথে একটা লেখা লিখব, পরদিন ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’র ফার্স্ট পেজে দুজনের রেলভ্রমণের অভিজ্ঞতার কথা লেখা হবে। আগের রাতে গেছি হুমায়ূন ভাইর সঙ্গে দেখা করতে। তিনি সব শুনে বললেন, যাচ্ছ ভালো কথা, কিন্তু সমরেশদার সঙ্গে দেখা হলে কিছুতেই তাঁকে আর তুমি করে বলবে না।

কলকাতায় যাব আর সমরেশদার সঙ্গে দেখা হবে না, এটা হতেই পারে না। এক অনুষ্ঠানে দেখা হলো। লেখকদের কলকাতার স্মৃতি নিয়ে অনুষ্ঠান। নামকরা অনেক লেখক সেই অনুষ্ঠানে। আমাকে নিয়ে গেছেন ছড়াকার দীপ মুখোপাধ্যায়। গিয়ে আমি মুগ্ধ। সুনীল শীর্ষেন্দু সমরেশ নবনীতা দেবসেন—এ রকম অনেকে। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক পবিত্র সরকার। সমরেশদার একটু তাড়া ছিল। তিনি তাঁর বক্তব্য শেষ করে মঞ্চ থেকে নেমে এলেন। আমি তাঁর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। কেমন আছেন, সমরেশদা? সমরেশদা গম্ভীর হয়ে গেলেন। তুমি কিন্তু আমাকে তুমি করে বলতে? আজ আপনি আপনি করছ কেন? আমি আর বলার চান্স পেলাম না, হুমায়ূন ভাইর ভয়ে বলছি।

কলকাতায় হুমায়ূন ভাইকে ব্যাপকভাবে পরিচিত করানোর কাজটি করেছিলেন সমরেশদা। ‘দেশ’ পত্রিকায় পর পর আট বছর হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস ছাপা হয়েছে। ‘দেশ’ পত্রিকার সম্পাদককে হুমায়ূন আহমেদ সম্পর্কে বুঝিয়েছিলেন সমরেশদা। আমার ক্ষেত্রেও একই কাজ করেছিলেন। ‘দেশ’ পুজো সংখ্যা প্রতিবছর ছেপে যাচ্ছিল হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস, আর ‘আনন্দলোক’ ছাপছিল আমার উপন্যাস।

আরেকজন লেখকের কথা বলে এই লেখা শেষ করি। তাঁর নাম রমাপদ চৌধুরী। খুবই গুরুগম্ভীর মানুষ। ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’র ‘রবিবাসরীয়’ পাতা দেখেন। সমরেশদা হুমায়ূন ভাইকে নিয়ে গেছেন তাঁর কাছে। পরিচয় করিয়ে দিলেন। হুমায়ূন ভাই রমাপদ চৌধুরীর লেখা পছন্দ করেন। আমাকে বহুবার তাঁর ‘দ্বীপের নাম টিয়া রঙ’ বইটির কথা বলেছেন। পরিচয় হলো ঠিকই, কিন্তু রমাপদ চৌধুরী তাঁর স্বভাবগত কারণেই তেমন কথাবার্তা বললেন না। হুমায়ূন ভাই তাঁর ‘গল্পসমগ্র’ বইটি রমাপদ চৌধুরীকে উপহার দিয়ে এলেন। মাসখানেক পর রমাপদ চৌধুরীর একটা চিঠি এলো হুমায়ূন ভাইয়ের কাছে। তিনি লিখেছেন, ‘আমি আপনার গল্পগুলো পড়ে মুগ্ধ এবং বিস্মিত হয়েছি। আপনার বহু গল্প বাংলা সাহিত্যের স্থায়ী সম্পদ হিসেবে গণ্য হবে। আপনি একজন বিশাল মাপের লেখক।’

আমাদের সেই বিশাল মাপের লেখক আমাদের দরিদ্র করে চলে গেছেন। হুমায়ূন ভাই, যে অচিনলোকে আপনি আছেন, সেখান থেকে আমাদের ভালোবাসা গ্রহণ করুন। জন্মদিনের শুভেচ্ছা।

Source: https://www.kalerkantho.com/online/national/2020/11/13/975257