সব খবর প্রতি সকালে আপনার ইনবক্সে
আয়কর দফতরের কর্তাদের কিছু দিন আগেও মজা করে বলতে শোনা যেত, ‘‘সুরাতের সঙ্গে দৌড়ে পিছিয়ে পড়েছে আপনাদের কলকাতা। গুজরাতের সুরাতই এখন এগিয়ে!’’কিসের দৌড়? কোন শহরে কাগজে-কলমে কত ভুয়ো সংস্থা তৈরি হয়, তার দৌড়!কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদুরাপ্পার পরিবারের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে ফের কলকাতায় তৈরি ভুয়ো সংস্থার নাম উঠে আসায় প্রমাণ হল, পিছিয়ে পড়লেও কলকাতা এখনও দৌড়ে রয়েছে।
লালবাজার থেকে বৌবাজার, গোটা দেশের বড় সংখ্যক ভুয়ো সংস্থার আঁতুড়ঘর এখনও মধ্য কলকাতার বিভিন্ন অলিগলি। সেখানেই কাগজে-কলমে নিত্য দিন নতুন নতুন সংস্থা তৈরি হচ্ছে। তার পর আর্থিক লেনদেনও হচ্ছে। কিন্তু সে সব সংস্থার না আছে কোনও দফতর, না আছে কর্মী, না আছে কলকারখানা বা ব্যবসা।
বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পার পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁদের কাছে ঘুষের টাকা গিয়েছে কলকাতার সাতটি সংস্থার মাধ্যমে। ঘুষের অভিযোগ প্রমাণ না হলেও সরকারি খাতায়-কলমে ওই সাতটি সংস্থা রয়েছে। তাদের ঠিকানা বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিটের দু’টি বাড়ি। যেখানে আদতে এমন কোনও সংস্থাই নেই!
আরও পড়ুন: এ বার দুর্গোৎসবের উদ্যোক্তাও বিজেপি
আরও পড়ুন: মণীশ খুনে তদন্ত রিপোর্ট চাইল হাইকোর্ট
আয়কর দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘কিছু দিন আগে পর্যন্তও দেশের ১০০টার মধ্যে ৯০টা ভুয়ো সংস্থারই ঠিকানা ছিল কলকাতা। গত দু’তিন বছরে কালো টাকার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের তৈরি তদন্তকারী দল একাধিক অভিযান চালানোয় ইদানীং সুরাতে এই কারবার বেড়েছে। কিন্তু কলকাতায় এখনও কারবার ভাল রকমই চলছে।’’কেন ভুয়ো সংস্থা তৈরি হয়? কেনই বা কলকাতায় তার আঁতুড়ঘর?
আরও পড়ুন: আয়ুষ মিশনের টাকা খরচে ব্যর্থ রাজ্য
আয়কর দফতর, কর্পোরেট মন্ত্রকের এসএফআইও-র কর্তাদের মতে, মূলত কর ফাঁকি দেওয়ার জন্যই খাতায়-কলমে ভুয়ো সংস্থা তৈরি হয়। বাজারে এর নাম ‘জমা-খর্চি কোম্পানি’ বা শেল কোম্পানি। যেমন, কোনও সংস্থা ১০ কোটি টাকা আয় করলে তাকে ২ কোটি টাকার বেশি কর দিতে হয়। কিন্তু কলকাতায় এমন লোক পাওয়া যায়, যাঁরা ৫০ হাজার টাকা পেলেই রাতারাতি নতুন সংস্থা খুলে নানা রকম আর্থিক লেনদেন দেখিয়ে কর ফাঁকির ব্যবস্থা করে দেবেন। সাধারণ মালবাহক, দিনমজুর, চা-ওয়ালা, নিরাপত্তা কর্মীদের নাম-ধাম দিয়ে তাঁদের সংস্থার ডিরেক্টর দেখানো হবে। মধ্য কলকাতায় এমন অনেক ব্রোকার, এন্ট্রি অপারেটর রয়েছেন, যাঁরা ছোট্ট ঘরে টুলে বসে, কোলে ল্যাপটপ নিয়ে নতুন সংস্থা তৈরি করে ফেলবেন। ৫ থেকে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে এমন অনেক গরিব মানুষ মিলবে, যাঁরা সেখানে খুশি সই করে দেবেন।
সিবিআই কর্তারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, অগুস্তা-ওয়েস্টল্যান্ড চপার দুর্নীতির তদন্তে নেমেও কলকাতায় ভুয়ো সংস্থার সন্ধান মিলেছিল। বায়ুসেনার প্রাক্তন প্রধান এস পি ত্যাগীর দুই আত্মীয় সন্দীপ ও সঞ্জীব ত্যাগীর সংস্থা নীল মাধব কনসালট্যান্টস কলকাতার মৈনাক এজেন্সি নামের একটি ভুয়ো সংস্থা কিনে নেয়। দুই সংস্থার আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমেই ৫ কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছিল ত্যাগীর পরিবার।
কী ভাবে ভুয়ো সংস্থার মাধ্যমে কালো টাকা সাদা হয়?
এসএফআইও-র এক কর্তা বলেন, কেউ যদি কর ফাঁকির ১০ কোটি টাকা কালো থেকে সাদা করতে চান, তা হলে তিনি যে কোনও এন্ট্রি অপারেটরকে ১০ লক্ষ টাকা দেবেন। সে কোম্পানি খুলে ১০০ টাকা মূল্যের ১০ হাজার শেয়ার তৈরি করবে। তার পরে সেই শেয়ার ১০,০০০ টাকার চড়া দামে ভুয়ো ডিরেক্টরদের বেচে দেওয়া হয়েছে বলে দেখানো হবে। ফলে সংস্থার মূল্য রাতারাতি ১০ লক্ষ টাকা থেকে ১০ কোটি টাকায় পৌঁছে যাবে। তার পরে একাধিক ভুয়ো সংস্থার মাধ্যমে টাকা ফের আসল মালিকের কাছে পৌঁছে যাবে। আয়কর দফতরের কর্তাদের আফশোস, ‘‘তদন্তে নেমে আখেরে সামান্য টাকার বিনিময়ে ডিরেক্টর হিসেবে সই করা গরিবদেরই সন্ধান মেলে। আসল কালো টাকার মালিকদের জালে পুরতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়।’’
শেয়ার করুন
শেয়ার করুন
সব খবর প্রতি সকালে আপনার ইনবক্সে
আরও খবর
Source: https://www.anandabazar.com/state/the-hub-of-the-fake-company-is-in-kolkata-1.1215191