কলকাতার ১৯ এলাকা নিয়ে চিন্তা, কড়া হচ্ছে নজরদারি – এই সময়

কলকাতা নিউজ

এই সময়: কলকাতায় ক্রমেই চওড়া হচ্ছে করোনার থাবা। গত ২৪ ঘণ্টায় কলকাতায় নতুন করে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২৮১, যা এখনও পর্যন্ত রেকর্ড। এই পরিস্থিতিতে আজ, মঙ্গলবার থেকে গত ১৪ দিনে শহরের যে ১৯টি এলাকায় করোনার প্রকোপ বেশি, সেখানে কঠোর নজরদারি রাখতে চলেছে প্রশাসন। ওই এলাকাগুলিতে গত কয়েক দিনে অন্তত ২১৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এলাকাভিত্তিক লকডাউন জারি হতে পারে করোনা সংক্রমণ নিয়ে চিন্তায় ফেলে দেওয়া ওই সব এলাকায়। এই পরিস্থিতিতে কলকাতা পুলিশ ও পুরসভা যৌথ ভাবে নজরদারি শুরু করছে। সোমবার রাত থেকেই বহু এলাকায় আগের মতোই বাঁশ দিয়ে ঘিরে দেওয়া শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ওয়ার্ড অফিসে পুর স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্তাদের সঙ্গে স্থানীয় থানার অফিসারেরা বৈঠকে বসে চূড়ান্ত করবেন নজরদারির পাকা বন্দোবস্ত। সব জায়গাতেই ২৪ ঘণ্টার পুলিশি পাহারার ব্যবস্থা হচ্ছে। লালবাজারের এক পদস্থ কর্তা নজরদারির কাজ পর্যালোচনা করবেন।

পুর-প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম জানান, আজ, মঙ্গলবার নবান্ন থেকে ঘোষণা করা হবে, শহরের ওই সব এলাকায় কী ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ
করা হবে। তবে শহরের নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় পুরোপুরি বন্ধ করা নিয়ে কিছু বলতে চাননি ফিরহাদ। তাঁর বক্তব্য, ‘আমাদের যা রিপোর্ট পাঠানোর, তা নবান্নে পাঠানো হয়েছে। রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর এবং পুলিশ-প্রশাসনের নিয়মিত পর্যবেক্ষণ রয়েছে। তাই এই বিষয়ে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার, সেটা চূড়ান্ত হলে রাজ্য সরকার ঘোষণা করবে।’ এদিন সন্ধ্যায় কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মাও বাহিনীকে তাঁদের কর্তব্য স্মরণ করিয়ে বার্তা দিয়েছেন। বলেছেন, কনটেনমেন্ট জোন এলাকায় যাতে যাবতীয় নিয়ম মানা হয় সেদিকে নজর দিতে। সকলে মাস্ক পরছে কি না, সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকছে কি না, সে দিকে ওসিদের নজর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন সিপি। যুগ্ম কমিশনার (সদর) শুভঙ্কর সিনহা সরকার-সহ ডেপুটি কমিশনার পদমর্যাদার অফিসারদের এ বিষয়ে খেয়াল রাখার কথা বলেছেন অনুজ।

যদুবাবুর বাজার, বাগরি মার্কেট, মেহতা বিল্ডিংয়ে সব কিছু নিয়ম মেনে চলছে কি না, সেদিকেও বাহিনীকে নজর দেওয়ার কথা বলেছেন নগরপাল। অনুজের পরামর্শ, বাজারগুলিতে নিয়মিত নজরদারির পাশাপাশি নাগরিকদের সচেতন করতে দায়বদ্ধতার সঙ্গে প্রচার চালাতে হবে। পুরসভার সঙ্গে সমন্বয় রেখে বাজারগুলি নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করার কথাও বলেছেন তিনি।

বুধবার থেকে সাত দিনের জন্য মালদায় কঠোর হচ্ছে লকডাউনের বিধিনিষেধ। ডালখোলাতেও কঠোর করা হচ্ছে নিয়ম। কলকাতায় অবাক করার মতো বিষয় হল, এদিন যে ২৮১ জন আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে মাত্র ১৩ জন বস্তির বাসিন্দা। পুরসভা জানাচ্ছে, গত কয়েক মাসের অভিজ্ঞতায় তারা দেখেছে, মূলত আবাসনেই, বিশেষ করে দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন বহুতল আবাসনে বেশি ছড়াচ্ছে করোনা। সেই তুলনায় প্রথম দিকে বস্তি থেকে আক্রান্তের খবর পাওয়া গেলেও, পরবর্তীকালে তা তলানিতে ঠেকেছে। মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্তদের উন্নাসিকতাই এই সংক্রমণ ছড়াতে অনুঘটকের কাজ করছে বলে মনে করছে পুর-প্রশাসন। সেই কারণে আগামী দিনকয়েক বা কয়েক সপ্তাহের জন্য এই এলাকাগুলিতে পুরোপুরি লকডাউনের পথেও হাঁটা হলে ফল মিলতে পারে বলে পুরকর্তাদের একাংশের অভিমত।

কেন বস্তির তুলনায় নির্দিষ্ট বাড়ি বা আবাসনের সংক্রমণ ছড়াচ্ছে? ফিরহাদ হাকিমের জবাব, বস্তিতে সংক্রমণ দেখা দিলে আক্রান্তকে হাসপাতালে পাঠানোর পাশাপাশি সেই পরিবারকে সরকারি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে পাঠানো হচ্ছে। সেই জায়গায় জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে।

এলাকা ঘিরে নজরদারি চলছে। কিন্তু বহুতল আবাসনের ক্ষেত্রে এই ধরনের কাজে বাধা আসছে বলে দাবি করেছেন ফিরহাদ। তিনি বলছেন, ‘বহুতল আবাসনে কেউ আক্রান্ত হলে তিনি হাসপাতালে যাচ্ছেন। কিন্তু তাঁর বাড়ির লোকেরা ঠিক ভাবে হোম কোয়ারান্টিনের নিয়ম-কানুন মানছেন না।’ বহুতল আবাসনের বাসিন্দারা অনুমতি না-দিলে সেখানে ঢুকে জোর করে জীবাণুনাশক ছড়ানো সম্ভব নয়। তাই এই ধরনের নানাবিধ আপত্তি এবং সমস্যার কারণে আবাসনের ক্ষেত্রে হাত-পা বাঁধা হয়ে যাচ্ছে প্রশাসনের, এমনটাই বলছে পুরসভা।

Source: https://eisamay.indiatimes.com/west-bengal-news/kolkata-news/coronavirus-covid-positive-cases-increased-in-19-areas-of-kolkata/articleshow/76825543.cms