মরসুমের উষ্ণতম দিন জুলাইয়ে! – এই সময়

কলকাতা নিউজ

এই সময়: গোটা গ্রীষ্মে যে গরমের সাক্ষী হতে হয়নি, জুলাইয়ের শুরুতে, ভরা আষাঢ়ে তারই মুখোমুখি কলকাতা। বৃহস্পতিবার আলিপুরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠে যায় ৩৮.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। যা চলতি সময়ের স্বাভাবিকের চেয়ে ছ’ডিগ্রি বেশি। সাধারণত, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের পাঁচ ডিগ্রি উপরে উঠলে তাপপ্রবাহ ঘোষণা করে আবহাওয়া দপ্তর। অন্য শর্তটি হল পারদ চল্লিশ পেরোতে হবে। এক্ষেত্রে তা না হওয়ায় সরকারি ভাবে তাপপ্রবাহের ঘোষণা হয়নি। তবে চড়া রোদের সঙ্গে আর্দ্রতার জ্বলুনি থাকায় গরমের অনুভূতি চল্লিশ ডিগ্রিও ছাপিয়ে গিয়েছিল মহানগরে! চরমে ওঠে অস্বস্তিসূচক।

চলতি মরসুমে আরামের গ্রীষ্ম কাটিয়েছে গোটা বাংলা। মার্চে শহরের তাপমাত্রা উঠেছিল ৩৬.৮ ডিগ্রিতে, এপ্রিলে ৩৮.২ ডিগ্রিতে। এ পর্যন্ত মরসুমের উষ্ণতম দিন ছিল উম্পুন আসার তিন দিন আগে। পরিষ্কার আকাশের জন্য শহরের তাপমাত্রা ৩৮.৩ ডিগ্রিতে পৌঁছয়। তবু তাপপ্রবাহের মুখোমুখি হতে হয়নি। আর ঘূর্ণিঝড়ের জন্য পরে তাপমাত্রা বাড়তেও পারেনি, উল্টে ২৭ ডিগ্রির নীচেও নেমে যায়। বৃহস্পতিবার ছিল সে দিনের চেয়েও বেশি গরম। শহরের উষ্ণতম দিন!

শুধু যে তাপমাত্রা ০.৪ ডিগ্রি বেশি, তা নয়। বর্ষার জন্য বাতাসের প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প রয়েছে। অথচ বৃষ্টি না হওয়ায় সেই জলীয় বাষ্পই ঘামিয়ে কাদা করে ছেড়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, আরও একটি রেকর্ড ভেঙেছে বৃহস্পতিবারের শহর। গত ১৫ বছরে জুলাইয়েরও উষ্ণতম দিন ছিল বৃহস্পতিবার। আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য, এর আগে রেকর্ডটি ছিল ২০১৫ সালের ঝুলিতে। সে বার ৫ জুলাই কলকাতার পারদ পৌঁছয় ৩৬.৭ ডিগ্রিতে। ১৫ বছরে পারদ ৩৮ ডিগ্রি তো দূর, সাঁইত্রিশ ছোঁয়নি একবারও। সর্বকালীন রেকর্ড ১৯৭১ সালের ১০ জুলাইয়ের। সে দিন অবশ্য কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯.৯ ডিগ্রিতে উঠে গিয়েছিল।

জুলাইয়ে এতটা গরম চট করে দেখা যায় না, কারণ মাসটা ভরা বর্ষার সময়। এ বছর বর্ষা শুরু থেকেই স্বমহিমায়। তা সত্ত্বেও রোদ কী ভাবে ছড়ি ঘোরানোর সুযোগ পেয়ে গেল, তা ভেবেই আশ্চর্য আমজনতা। তবে আবহবিদরা বলছেন, বর্ষা স্বমেজাজেই রয়েছে। তবে দক্ষিণে নয়, উত্তরবঙ্গে। মৌসুমি অক্ষরেখা উত্তরবঙ্গের উপর দিয়ে বিস্তৃত হওয়ায় যাবতীয় বৃষ্টি সে দিকেই হচ্ছে। যেমন, বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় আলিপুরে বৃষ্টি হয়েছে ৩০৫ মিলিমিটার, কুমারগ্রামে ২০৩ মিলিমিটার। বহু জায়গাতেই নদীর জল বাড়ছে। অথচ, দু’দিন ধরে দক্ষিণবঙ্গে প্রায় শুখা। উত্তর ভাসছে, দক্ষিণ পুড়ছে! আবহবিদরা বলছেন, শনিবারের আগে অক্ষরেখা দক্ষিণবঙ্গে সরবে না। ফলে আজ, শুক্রবারও গরমের দাপট থাকবে। তার পর অক্ষরেখার প্রভাবে বৃষ্টির চেনা ছবি ফিরতে পারে। তখন রোদের তেজ কমবে। তবে ভ্যাপসা গরম থাকবে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, টানা চার বছর চল্লিশ না ছুঁয়েই মার্চ-এপ্রিল-মে কাটিয়েছে কলকাতা। তবে গত দু’বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, মে পেরোনোর পর বেশি গরম পড়ছে। ২০১৮ সালে জুনে বর্ষা আসার পর তাপপ্রবাহ হানা দিয়েছিল কলকাতায়। তাপমাত্রা উঠেছিল ৪০.৬ ডিগ্রিতে। গত বছরও জুনের মাঝামাঝি চল্লিশের চৌকাঠে পৌঁছে গিয়েছিল পারদ। এ বারও কলকাতা মরসুমের উষ্ণতম দিনের সাক্ষী হল বর্ষায়। তবে জুন পেরিয়ে জুলাইয়ে।

Source: https://eisamay.indiatimes.com/west-bengal-news/kolkata-news/kolkata-hottest-day-in-july-in-last-15-years/articleshow/76764979.cms