শ্যামগোপাল রায়
রাজ্য সরকারের বিভিন্ন অফিস পেপারলেস করার প্রক্রিয়ার মধ্যেই কলকাতা পুরসভাকেও পুরোপুরি কাগজহীন করার উদ্যোগ নেওয়া হল। সম্প্রতি, এ বিষয়ে একটি বৈঠক হয়েছে। তাতে পুরসভাকে পুরোদস্তুর ই-অফিস করে তোলার রোডম্যাপ তৈরি হয়। গত বুধবার একটি বিজ্ঞপ্তিও জারি করেন পুর-কমিশনার বিনোদ কুমার।
কম্পিউটার, স্ক্যানার, ইন্টারনেট কানেকশনের মতো ই-অফিস চালুর অতি জরুরি ব্যবস্থাপনাগুলি এই মুহূর্তে কী অবস্থায় রয়েছে, কোথায় কী প্রয়োজন— সে সব জানতে চেয়েছেন কমিশনার। এক পুরকর্তার কথায়, ‘করোনা থেকে এখনই মুক্তির কোনও সম্ভাবনা বিশেষজ্ঞরা দেখছেন না। ই-অফিসে সংক্রমণ ঠেকানো যাবে, ফাইলের পাহাড়ও জমবে না টেবিলে।’
পুরসভায় অনলাইন ব্যবস্থা একেবারেই নেই, এমন নয়। যে ব্যবস্থা রয়েছে তার মাধ্যমে উপকৃত হন শহরবাসী। গত কয়েকবছর ধরেই পুরকর, ট্রেড লাইসেন্স, বিজ্ঞাপন, পার্কিং, মিউটেশন, বাড়ির অনুমোদন, জন্ম-মৃত্যুর নথিপত্রের তথ্য অনুসন্ধ্যান, শশ্মান সংক্রান্ত যাবতীয় অনলাইনের মাধ্যমে জানা যায়। নয়া ব্যবস্থায় কর্মীরাও উপকৃত হবেন।
করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিয়ম করে অফিস করে যাচ্ছেন পুরসভার অনেক অফিসারই। যাঁরা সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত অফিসে থাকার পাশাপাশি রাস্তায় বেরিয়েও কাজ করেছেন। পুরসভা সূত্রে খবর, পেপারলেস কাজ শুরু হলে ফাইল রিসিভিং থেকে শুরু করে ডেসপ্যাচ, সবটাই হবে অনলাইনে। আধিকারিকরা নিজেদের মধ্যে ‘নোট’ চালাচালি করবেন ই-অফিসে। আপাতত বিভাগীয় শীর্ষ আধিকারিকদের ক্ষেত্রে (এগজিকিউটিউ অফিসার, ম্যানেজার) এই ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। আগামী দিনে নিচুতলা পর্যন্ত ছড়িয়ে দেওয়া হবে। তবে, যতদিন প্রশাসনিক কাঠামোর একদম তৃণমূল স্তর পর্যন্ত ই-সিস্টেমে কাজ চালু করা না যাচ্ছে, ততদিন পুরোপুরি ‘পেপারলেস’ হওয়া সম্ভব নয়। পুরসভার তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সন্দীপন সাহা জানিয়েছেন, ‘সামগ্রিক প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে অনলাইনে করে ফেলা হবে। দ্রুত কাজ হবে। সে ক্ষেত্রে কোনও ফাইল কী অবস্থায় রয়েছে, তা নিখুঁত ভাবে ট্র্যাক করা সম্ভব হবে। আরও বেশি করে স্বচ্ছতা বজায় রাখা সম্ভব হবে।’
পুরসভা সূত্রের খবর, বর্তমানে কেন্দ্রীয় ভবনে প্রায় আড়াই হাজারের কাছাকাছি কম্পিউটার রয়েছে। পুরসভায় কয়েকটি বিভাগে অনলাইনে ফাইল ট্র্যাকিং সিস্টেম চালু রয়েছে, আগামীদিন পুরোটা ই-অফিসে হবে। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, রাজ্য সরকারের যে ইলেকট্রনিক অফিস সিস্টেম রয়েছে, সেটি পুরসভায় চালু হবে। নতুন করে কী কী দরকার, তার তালিকা শনিবারের মধ্যে সব বিভাগের আধিকারিকদের জমা দিতে বলা হলেও এখনও তা জমা পড়েনি। চলতি সপ্তাহে তা মিলবে বলে আশা করছেন তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের আধিকারিকরা।
১৯ জুন পুরসভার আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন পুর কমিশনার। সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে মূলত আগামী দিনে কী ভাবে পুরসভার কাজকর্ম চলবে, যাবতীয় নথিপত্র কী ভাবে কম্পিউটারাইজড করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর পরেই পুর প্রশাসকের কাছে আগামী দিনের পরিকল্পনার কথা জানান বিনোদ। বুধবারের জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে পুর কমিশনার জানিয়েছেন, পুর প্রশাসকের অনুমোদনের ভিত্তিতেই পুরসভাকে ই-অফিসে পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।
Source: https://eisamay.indiatimes.com/west-bengal-news/kolkata-news/kolkata-corporation-is-going-to-be-completely-paperless/articleshow/76706448.cms