লকডাউনের জেরে ইতিমধ্যেই দু’বার (২৩ ও ৩১ মার্চ) রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকেও বাতিল করা হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউনের কথা বলেছিলেন। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী লকডাউনের মেয়াদ বাড়ান ৩ মে পর্যন্ত। এই পরিস্থিতিতে কাল, বৃহস্পতিবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক নবান্নের ক্যাবিনেট রুমের বদলে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে নবান্ন সভাঘরে। সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিংয়ের ব্যাপারটি মাথায় রেখেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে নবান্ন সূত্রে।
কেননা, ক্যাবিনেট কক্ষে স্থান সঙ্কুলানের সমস্যার জন্য মন্ত্রীদের আসনের মধ্যে দূরত্ব রাখা সম্ভব নয়। তাই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে নবান্ন সভাঘরে এই আয়োজন। মূলত করোনা পরিস্থিতি এবং লকডাউনের জেরে রাজ্যের আর্থিক সঙ্কট নিয়ে আলোচনা হবে মন্ত্রিসভার বৈঠকে। অসংগঠিত শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজতে নতুন কোনও কর্মসূচি এই বৈঠকে অনুমোদন পেতে পারে। তবে দূরবর্তী জেলার মন্ত্রীদের লকডাউন ভেঙে মন্ত্রিসভার এই বৈঠকে যোগ না-দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কলকাতা-হাওড়ার পাশাপাশি হুগলি ও দুই ২৪ পরগনার মন্ত্রীরাই অংশ নেবেন বৈঠকে। এ দিন স্বাস্থ্যভবন প্রকাশিত বুলেটিনে বলা হয়েছে, রাজ্যে চিকিৎসাধীন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১১০ থেকে বেড়ে ১২০ হয়েছে। অর্থাৎ স্পষ্ট, এ যাবৎ মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা রাজ্যে ২০০ ছাড়াল। কেননা, কালিম্পং থেকে ন’ জন করোনা আক্রান্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও বেসরকারি সূত্র বলছে, রাজ্যে নতুন করে আরও ৩৪ জনের সোয়াব নমুনার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের ওয়েবসাইটে রাজো মোট আক্রান্তের সংখ্যা অবশ্য ১৯০ বলে দাবি করা হয়েছে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত। তবে করোনার জেরে মৃত্যু হয়েছে, এমন ব্যক্তির সংখ্যা বাংলায় সাত থেকে আর বাড়েনি যা নিশ্চিত ভাবেই স্বস্তি দিয়েছে রাজ্য সরকারকে। পিয়ারলেস ও টাটা মেডিক্যাল সেন্টারের পর এ দিন কলকাতার আরও চারটি ল্যাবকে (সুরক্ষা, ডক্টর লাল’স প্যাথ ল্যাব, পিয়ারলেস ও আমরি) কোভিড-১৯ পরীক্ষার অনুমতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় চিকিৎসা গবেষণা সংস্থা ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ। তবে স্বাস্থ্যভবনের অস্বস্তি বাড়িয়েছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। বেশ কয়েক জন রোগী, চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মী করোনার কবলে পড়ার পর তেঘরিয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতাল পরিষেবা সাময়িত বন্ধ রেখেছে।
সেখানে জীবাণুমুক্ত করার কাজ চলছে। তাই রবিবার সকালে বরানগরের বাসিন্দা এক কিডনি রোগী এক বৃদ্ধাকে এমআর বাঙ্গুরে রেফার করা হয়। কিন্তু পরিবার ওই রোগিণীকে নিয়ে চলে আসেন মেডিক্যালে। মহিলার স্বামী জানান, ওই বেসরকারি হাসপাতালে এক কিডনি রোগীর ডায়ালিসিসের পর ওই ওয়ার্ডে যাঁদের যাঁদের ডায়ালিসিস হয়েছিল, প্রায় প্রত্যেকেরই পরে কোভিড-১৯ পজিটিভ রিপোর্ট আসে। তাঁর স্ত্রীরও সেখানে ডায়ালিসিস হয়। হাসপাতাল সূত্রের খবর, এত কিছু জানার পরও কোনও সুরক্ষাকবচ ছাড়াই তাঁকে দেখেন চিকিৎসক। রাখাও হয় তাঁকে আইসোলেশন ছাড়া, প্রথমে ইমার্জেন্সি অবজার্ভেশন ওয়ার্ডে ও পরে ফিমেল মেডিসিন ওয়ার্ডে। সোমবার করোনার মতো উপসর্গ প্রকট হলে তখন তাঁকে আইসোলেশনে পাঠানো হয়। দু’টি বেসরকারি হাসপাতালের দুই চিকিৎসকও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে খবর।
Source: https://eisamay.indiatimes.com/west-bengal-news/kolkata-news/relatives-didnt-accept-covid-19-patients-body-in-kolkata/articleshow/75155609.cms